সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন

পাখি এখন কোটিপতি

স্বদেশ ডেস্ক:

মো. আব্দুস সামাদ পাখি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাংগীপাড়ার এই যুবক ১৫ বছর আগেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে বুট-বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন তার কোটি কোটি টাকা। আছে দামি গাড়ি-বাড়িও। অভিযোগ রয়েছে, পাখির এই বিলাসী জীবনের পুরোটাই প্রতারণায় ভরা। কম সময়ে কোটিপতি হতে সব ধরনের ‘ধান্দাই’ তিনি করেছেন। মাদক কারবার থেকে শুরু করে তরুণীদের জিম্মি করা- কোনো কিছুই বাদ রাখেননি তিনি। পাখির এসব অপরাধ সম্পর্কে সপ্তাহখানেক আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক বিমানবাহিনীর কর্মকর্তার ভুক্তভোগী মেয়ে।

জানা গেছে, পাখি যে কোনো সময় র‌্যাব, ডিবি, এমনকি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বেশ ধরেন। এসব বেশ ধরে বিলাসবহুল পাজেরো গাড়িতে করে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করেন তিনি। হেরোইন পাচারের এক মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত (ওয়ারেন্ট) আসামিও। আর প্রেমের ফাঁদে ফেলে আলিশান ভবনে নিয়ে তরুণীদের কৌশলে অচেতন করে তাদের সঙ্গে করেন বিকৃত যৌনাচার। পাখি তরুণীদের কেবল ভোগই করেন না, গোপন ক্যামেরায় সেই ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছাড়ার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তিনি ৩০ তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

পাখির বিরুদ্ধে অভিযোগ, একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বহনকারী পাখি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন চাকরিদাতা প্রতারকচক্রের বিশাল সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তরুণ-তরুণীদের সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এসব অভিযোগে পাখির বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৪৯টি মামলা রয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের দপ্তরে অভিযোগ জানানো তরুণীর ভাষ্য, তিনি একজন সংগীতশিল্পী এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী। প্রতারকচক্রের হোতা আব্দুস সামাদ পাখির খপ্পরে পড়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ১৫ বছর আগেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন এই পাখি বনে গেছেন কোটিপতি। ২০১৬ সালে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হেরোইন পাচার করতে গিয়ে দুই তরুণীসহ ধরা পড়েন পাখি। রাজশাহী গোদাগাড়ি থানায় মাদক পাচার আইনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি পাখি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ডিএমপির মিরপুর মডেল, উত্তরখান, কাফরুল, উত্তরা পশ্চিম, পল্টন, হাতিরঝিল, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা রয়েছে। এভাবে অপরাধ কর্মকা- করে গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল ভবন, রাজধানীর গুলশান, মোহম্মদপুর, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আলিশান বাড়ি গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

ওই তরুণী অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, পাখি প্রতারণা করেছেন রাষ্ট্রের সঙ্গেও। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সংখ্যা একাধিক। পাখির ছবিসংবলিত একটি পরিচয়পত্রের নামের স্থলে লেখা রয়েছে- সামাদ খান পাখি, পিতা- আব্দুল হক, মাতা- জেবুনেছা, জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৩২৮৩৩৫৩৪১৯। অন্যটির নাম লেখা মো. আলম খান, পিতা- আসাদ খান, মাতা- সাবিনা খানম, এনআইডি নং-১৯৮৪২৬৯৬১৬৮০০০০৭১। তিনি একেক জায়গায় একেক আইডি ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতারণা। শুধু তাই নয়, জাল কাগজ তৈরি করে তিনি একই গাড়ি বিক্রি করেন একাধিক ব্যক্তির কাছে।

গতকাল ভুক্তভোগী তরুণী আমাদের সময়কে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোয় পাখি প্রতিনিয়ত তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ পাখির একাধিক মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। জবাব পাওয়া যায়নি এসএমএস পাঠিয়েও।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877